Profile image of চঞ্চল সিংহ রায়
চঞ্চল সিংহ রায়

@চঞ্চল

আমার মন ভালো হলে একটু লিখি.

4 years ago 755 views

ভণ্ডসাধু

সিধু মুখ বিকৃতি করে বললো "আমার বয়ে গেছে ওই ভন্ড বুড়োকে প্রণাম করতে। তোমাদের দরকার তোমরা করো। আমাকে বলবে না"।


এইকথা শুনে গুরু দেব রেগে আগুন একে তো এত বেলা অবদ্ধি সে নাখেয়ে ।গরমে ঘেমে নেয়ে গিয়েছে।তার ওপর এই অপমান আর সহ্য হয়। তিনি হরিচরন বাবুকে বললেন ,"তুই আমাকে বাড়িতে ডেকে এনে ছেলেকে দিয়ে অপমান করালি। তুই ধংষ হয়ে যাবি, তোর বাড়িঘর সব ধংষ হয়ে যাবে। এই নেপা চ আমি এখুনি এই গৃহ ত্যাগ করবো"। হরিচরনবাবু তাড়াতাড়ি গুরু দেবের পা জড়িয়ে ধরলেন। আর বললেন "না গুরু দেব আপনি যাবেন না আপনি চলে গেলে আমার সর্বনাস হয়ে যাবে, ও ছোটো না বুঝে আপনাকে কটুকথা বলে ফেলেছে, ওকে ক্ষমা করে দিন। ও আপনার পা ধরে ক্ষমা চাবে গুরুদেব"।


তারপর সিধুর দিকে মুখ ঘুরিয়ে বললেন। এই হতচ্ছাড়া আয় এইদিকে গুরু দেবের পা ধরে ক্ষমা চা। সিধু বাবাকে খুব ভয় পায়, তাই বাধ্য হয়ে গুরু দেবের পা ছুয়ে ক্ষমা চাইল। গুরুদেব রেগে রেগে বললেন তুই আমার পা ছাড়, তুই আমাকে ছুঁবি না দূর হ আমার সামনে থেকে। শোন হরি আমি তোর বাড়িতে থাকতে পারি একটা শর্তে। হরিচরনবাবু বললেন কি শর্ত গুরুদেব,আমাই বলুন ? আমি আপনার সবকথা মেনে চলবো।গুরুদেব বললেন তোর ওই ছেলে যেন আমার সামনে না আসে। হরিচরন বাবু তাড়াতাড়ি সিধু কে বললেন শোন সিধু ,গুরু দেব যা বলছে তাই কর তা না হলে তোকে আমি ত্যয্য পুত্র করবো। এই কথা শুনে সিধু খুব রেগে উপরের ঘরে চলে গেল। হরিচরন বাবু গুরুদেবকে বললেন "গুরুদেব আপনি দয়াকরে কক্ষে চলুন । আর সরমা দেবি কে বললেন গুরুদেবের জল ও মধ্যান্ন ভোজোনের ব্যাবস্থা করতে"।


হরিচরন বাবু গুরুদেব কে ঘরের ভিতরে নিয়ে গেলেন। তারপর গুরুদেব একটা পালঙ্কে উঠে বসলেন, আর তার শিষ্য একটি তাকিয়াই। চাকরেরা পাখার বাতাস করতে লাগল।


এদিকে সরমাদেবী গুরুদেবের আর তার শিষ্যর জন্য আহারের ব্যাবস্থা করছন। দুটি থালায় পরিপাটি করে ভাত সাজিয়ে ছেন। তার চার পাশে অনেক রকমের ভাজা ,শাক শবজি ও অনেক রকমের পদ সাজিয়ে দিয়েছেন বাটিতে বাটিতে করে। এমন সময় সিধু ঘরে ঢুকে সরমাদেবী কে বললো "মা আমাকে খেতে দাও"।


"সিধু তুই আবার নিচে এসেছিস ,গুরুদেব দেখে ফেললে আবার অশান্তি হবে। তুই ওপরের ঘরে যা বাবা কাউকে দিয়ে তোর খাবার পাঠিয়ে দিচ্ছি" - সরমা দেবি বললেন।


সিধু রেগে গিয়ে বললো, ওই বুড়োর জন্য আমাকে আমার বাড়িতে গৃহবন্ধি হয়ে থাকতে হবে , দাড়াও আমি ওর বারটা বাজাচ্ছি। সরমা দেবি সিধুকে তার মাথার দিব্বি দিয়ে বললো বাবা তুই যদি কনো অশান্তি করিস তাহলে আমার মরা মুখ দেখবি। সিধু শিক্ষিত নাস্তিক ছেলে হওয়া সত্তেও মায়ের দিব্বির কথা শুনে, মুখ নিচু করে তার নিজের ঘরে চলে গেল। এরপর সরমা দেবি গুরুদেবের আহার সামগ্ৰী নিয়ে তাঁকে খাওয়াতে গেল।সরমাদেবীর পিছন পিছন ঝি চাকরেরা কেউ জল ,কেই হাত ধোবার পাত্র নিয়ে চললো।তার পর ঘরেঢুকে আসন পেতে দিল। গুরু দেব আসন গ্ৰহন করে হাতে জল নিয়ে বিড়বিড় করে মন্ত্র বলে, থালার চারিদিকে জল ছড়িয়ে দিলেন। তারপর সরমাদেবী কে বললেন, "ওরে বেটি এ কতো খাবার এনেছিস"।


হরিচরন বাবু বললেন তাতে কি গুরু দেব আপনাকে সব খেতে হবে কিন্তু। গুরুদেব বললেন "তাতো বটেই, তোর মনের প্রার্থনা না শুনে কি আর আমি পারি। যতই হোক তুই আমার শিষ্য বলে কথা। কইরে নেপা খাওয়া শুরু কর"। গুরুদেব বলা মাত্রই নেপা খাবার সাবাড় করতে লাগলো। যেন বুনো হাতি ঘাস খাচ্ছে।গুরুদেব এবার খাওয়া শুরু করলেন। দুটি চাকর গুরু দেবকে বাতাস করছে। সরমাদেবী হরি চরন বাবুকে বললেন,"আমি হেঁসেলে যাচ্ছি ,গুরু দেবের কিছু লাগলে বলো"। এরপর সরমা দেবি হেঁসেলে এসে ঝি'কে দিয়ে, সিধুর খাবার পাঠিয়ে দিলেন।


ঝি এবার খাবার সিধুর ঘরে ঢুকলো ।তারপর সিধুকে বললো "ছোটো বাবু আপনার খাবার রেখে গেলাম ,খেয়ে নেবেন"। সিধু তাকে জিজ্ঞেস করলো ,যে গুরু দেব কি করছে রে। সে উত্তর দিল "আজ্ঞে তিনি সেবা করছেন"। কেনো কিছু হয়েছে ছটো বাবু। সিধু বললো না তুই যা। তার পর ঝি চলে যেতেই, সিধু মনে বলতে লাগলো, ওই পাজি বুড়োটাকে সায়েস্তা করতেই হবে। ওর আমাদের অন্ন ধংষ করা বার করছি। হরিচরন বাবু জিজ্ঞাসা করলো, গুরুদেব আর কিছু লাগবে। গুরুদেব উত্তর দিল "না বাপু আর নয় ,আমি সল্প আহারি মানুষ, আর তাছাড়া সাধকদের এত খাওয়া দাওয়া উচিত নয়"। হরিচরন বাবু চাকরকে বললেন ,ওরে গুরুদেবকে হাত ধোবার জল দে। তারপর গুরুদেব ও তার শিষ্য নেপা হাত মুখ ধুয়ে বিছানা নিল। হরিচরন বাবু বললেন "তা হলে আপনারা সয়ন করুন ,আমি এখন আসি ,গুরুদেব"। গুরুদেব বললো "হাঁ এখন আয়, তবে আজ সন্ধে বেলাই আমি ইশ্বরের নামগান করবো তুই তার আয়োজন করে রাখিস"। হরিচরনবাবু ঠিক আছে গুরুদেব বলে, ঘর থেকে চলে গেলেন। এরপর চাকরেরা পাখার বাতাস করতে লাগলো। আর সেই ঠান্ডা বাতাস খেয়ে গুরুদেব ও তার শিষ্য ঘুমিয়ে পড়লেন।


এরপর সন্ধা বেলায় শুরু হল নাম গানের আসর ,গুরু দেব ও তার শিষ্য নেচে নেচে নাম গান করলেন। ভক্তরা সব গুরুদেবের জয় গান করতে লাগলেন। সবাই গুরু দেবকে প্রণাম করে তার ঝুলিতে দক্ষিনা গুজে দিচ্ছেন।গুরুদেব তা সানন্দে গ্ৰহণ করলেন। আর সবাই কে খুশি মনে আশির্বাদ করলেন। এসব দেখেশুনে সিধু আরো রগে গেলো। সে মনে মনে ফন্দি আটলো, যে কি করে গুরু দেবকে জব্দ করবে। এদিকে নাম গান শেষ হতে হতে রাত নটা সাড়ে'নটা বেজে গেলো। ভক্তরা সবাই যেযার বারি চলে গিয়েছেন। গুরুদেব রাতের বেলা লুচি আলূর দম মন্ডা মিঠাই খেয়ে বসে বসে পান চিবাচ্ছেন। এমন সময়, হরি চরন বাবু গুরু দেব বলেন "তাহলে গুরু দেব আপনি নিদ্রা করুন, আমি আসি"।


গুরুদেব মাথা নেড়ে বললেন "হাঁ আয়, তবে, যারা বাতাস করছিল ওদেরকে দেখিয়ে বললেন, ওদেরকে নিয়ে যা"।


"চাকরেরা না থাকলে আপনাকে বাতাস করবে কে?" হরিচরন বাবু বললেন।


গুরুদেব মিষ্টি হেসে বললেন "আমার বাতাসের প্রয়োজন নেই ,আমি আমার সাধনার শক্তি দিয়ে শরীরকে শিতল রাখতে পারি। তা ছাড়া রাতে দেবদেবীরা আমার কছে আসে ,কথাবলে ,ওরা থাকলে অসুবিধে হবে।তুই ওদের কে সঙ্গে করে নিয়ে যা"।


"ঠিক আছে আপনার যা ইচ্ছে”,এই বলে হরিচরনবাবু, "ওরে তোরা চলে আয়, গুরু দেব শয়ন করবেন", বলে গুরুদেবকে প্রণাম করে ঘর থেকে চলে গেলেন। চাকরেরা পাখা হাতে নিয়ে ঘরথেকে বেরিয়ে গেলো।


Image for ভণ্ডসাধু