Profile image of চঞ্চল সিংহ রায়
চঞ্চল সিংহ রায়

@চঞ্চল

আমার মন ভালো হলে একটু লিখি.

4 years ago 758 views

ভণ্ডসাধু

এরপর সবাই খাওয়া দাওয়া করে যে যার ঘরে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো। সারাদিনের ধকলের কারনে শুতে না শুতেই সবাই ঘুমিয়ে পড়লো। পুরো বাড়ি নিসুতি নিরঝুম। শুধু দু-একটা লন্ঠন জলছে টিপ টিপ করে। সবাই যখন ঘুমে অচেতন, তখন সিধু ওপর থেকে পা টিপে টিপে নিচে নেমে এলো। তার সারা শরীর সাদা চাদরে মোড়া। আর সেই চাদরের জায়গায় জায়গায় আলতার লাল রঙ লাগিয়েছে। যা দেখে মনে হচ্ছে কোনো সাদা মুর্তির গা বেয়ে রক্ত ঝরছে। এই অবস্থাই সিধু গুরুদেবের ঘরের ঘরের জানালাই উঁকি মারলো। আর যা দেখলো আর শুনলো, তা সে স্বপ্নেও ভাবে নি। সিধু দেখল গুরুদেব পালঙ্কে পিঠ হেলান দিয়ে বসে আছে।আর তার শিষ্য নেপা তার হাতে মদের গ্লাস তুলে দিচ্ছে আর নিজেও মদ খাচ্ছে। গুরুদেব নেপা'কে বললো, "বুঝলি নেপা এদের না অনেক পয়সা । এদের কাছ থেকে কিছু মালকড়ি আদাই করতে হবে। কি করে করা যাই তাই ভাবছি!”


"গুরুদেব আমার মাথায় না একটা বুদ্ধি এসেছে ,আপনাকে বলবো"। গুরুদেব বললেন ,তা বলদেখি আমি শুনি। নেপা বললো "গুরুদেব, হরিচরনের ছোটো ছেলেটা খুব বদ মেযাজী ,আপনি যদি হরিচরন কে বলেন, যে তোর ছেলের খুব বিপদ ওকে রাহু তে গ্ৰাস করেছে। ওর দোষ কাটাতে হবে। তা হলে হরিচরন বাবু আপনার কথাতো আর ফেলতে পারবেন না। আর এই সুজোগে আমরাও,যজ্ঞ করার নাম করে কিছু কামিয়ে নিতে পারবো"।


গুরু দেব বললেন "সত্তিই নেপা তুই আমার যোগ্য শিষ্য।তোর বুদ্ধির তুলনা হয়না।তুই আমার থেকেও অনেক নাম কামাবি।" নেপা বললো, "আজ্ঞে গুরুদেব সবিই আপনার আশীর্বাদ"।


এই কথা শুনে সিধু জানলার বাইরে থেকে নাকি সুরে বলে উঠলো "ওরে হত্তছাড়ারা, তোদের এতো বড়ো সাহস। আমার বাড়িতে ভন্ডামি। তোদের ঘাড় মটকে আমি রক্ত খাবো"। এই কথা শুনা মাত্রই গুরুদেব ও তার শিষ্য নেপা জানালার দিকে তাকালো। জানালায় তারা দেখতে পেল অন্ধকারের মধ্যে একটা সাদা মূর্তি নড়াচড়া করছে। আর নাকি সুরে অট্টহাসি হাসছে। আর তা দেখা মাত্রই নেপা রাম, রাম, বলতে বলতে মুচ্ছা গেলো। আর গুরুদেব কাঁপা কাঁপা সুরে, সেই সাদা মুর্তির কে উদ্দেশ্য করে বললেন, কে তুমি। এবার সিধু নাকি সুরে বললো। "তবে শোন আমি হরিচরনের পিতা শ্যামা চরন। আমি পনেরো বছর আগে ঈয়োলোক ত্যাগ করেছি। কিন্তু আমার মুক্তি মেলেনি তাই ,আমি এই বাড়িতে ঘোরা ফেরা করি"। এই কথা শুনেই গুরুদেবের টিক্কি খাড়া হয়ে গেল। সে "ভুত ভুত" বলতে বলতে চিৎকার করতে লাগলো।


তার চিৎকার শুনে হরিচরনবাবু , সরমা দেবী ,ও বাড়ির অনান্য সদস্যরা গুরুদেবের ঘরে ছুটে আসলেন। আর ছুটে এসে দেখলেন গুরুদেব ঘরের মেঝেই পরে হাঁপাচ্ছেন,আর রাম রাম করছেন। তার পায়ের দিকে নেপা অজ্ঞান হয়ে পরে আছে । ঘর থেকে প্রচন্ড মদের গন্ধ বেরোচ্ছে। চারপাশে মদের গ্লাস, মদের বোতল গড়াগড়ি খাচ্ছে। তাই দেখে হরিচরন বাবু গুরুদেবকে জিজ্ঞেস করলেন ,"গুরু দেব কি হয়েছে আপনার আপনি চিৎকার করছেন কেন। আর ঘরের মধ্যে এ সব কি "।


গুরুদেব হাপাতে হাপাতে বললেন, "ভুউউউত"।


হরি চরন বাবু বললেন কোথায় ভুত । গুরু দেব জানালার দিকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন। হরিচরন বাবু জানালায় তাকিয়ে দেখলেন, সিধু মিচকি মিচকি হাসছে। হরিচরন বাবু রেগে গিয়ে সিধু কে বললো "এই সিধু ভেতরে আয়, আয় বলছি"। সিধু আস্তে,আস্তে ভিতরে আসলো।তারপর গুরুদেবের দিকে তাকিয়ে ,তার দসা দেখে হেসে ফেললো। তারপর গুরুদেব কে জিজ্ঞাসা করলো "কি গুরুদেব নেসাটা কেটে গেলো বুঝি !" গুরুদেব সিধুর দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলেন। তার বাক্কি যেন কে হরন করেছে। হরিচরন বাবু সিধুকে বললেন "এই সিধু কি হয়েছে আমাকে সব খুলে বল"।


হরিচরন বাবু সবশুনে খুব রেগে গেলেন। তিনি দারয়ান কে ডাকলেন।এই মদন লাল তাড়াতাড়ি আয় এখানে। হরিচরনবাবু মদনলাল কে আদেশ করলেন,"যা এই ভন্ডগুরুদেব ও তার চেলাটাকে রাস্তায় ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে আয়"। মদনলাল কর্তার আদেশ পেয়ে ,গুরুদেব ও তার শিষ্যকে টানতে টানতে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে, সদর দরজার বাইরে বের করে দিলো। তারপর দরজা বন্ধ করে এসে হরিচরন বাবুকে বললো "বাবু ওরে ঘারধাক্কা দিয়ে রাস্তায় ফেলে দিয়েছি।আর বলেছি এ বারির দিকে যদি কখনো আসে তা হলে দুটোর ঠ্যাং ভেঙে দেবো"।


হরিচরনবাবু ও সরমাদেবী এবার সিধুকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। হরিচরন বাবু সিধুকে বললেন "বাবা, আজ তোর জন্য আমি ওই ভন্ড লোকটাকে চিনতে পার লাম। তোকে আমি অনেক কটু কথা বলেছি বাবা তুই আমাকে ক্ষমা করে দিস"। সিধু বাবাকে বললো "ও কথা বলোনা বা আমার পাপ হবে। তোমাদের তো কোনো দোষ নেই । ওই ভন্ড টাই তো তোমাদের মিথ্যে বুঝিয়েছে"।


এরপর ওই গুরুদেব ও তার শিষ্যর টিকিটাও দেখা যাই নি।


Image for ভণ্ডসাধু