শিক্ষার সেকাল --- একাল
ব্রিটেন থেকে যেভাবে নিদের্শ আসতাে সেই অনুযায়ী বিভিন্ন গর্ভনর -এর মাধ্যমে এদেশ চালনা হতাে গর্ভনর জেনারেলের মধ্যে টেগার্ট খুব অত্যাচারী ছিলেন । তিনি ভারতীয়দের উপর অকথ্য অত্যাচার করতেন । এই অত্যাচারের কাহিনী সব ধীরে ধীরে ইংলন্ডে ছড়িয়ে পড়ল । ভারতীয়রা যাতে শিক্ষা না পায় । মাছি মারা কেরাণীগিরি করে , মােসাহেবী Good Night , Good Morning করে এর বেশী যেন তারা শিক্ষা না পায় তার চেষ্টা চলে ।
চাকুরীর ক্ষেত্রে সেপাহী হয়ে ভারতীয়রা থাকতাে । শিক্ষার অভাবে ভারতীয়রা উচ্চপদে অধিষ্ঠিত হতে পারত না।এই ভাবে প্রায় একশত বছর ভারতীয়রা ইংরেজদের পদানত হয়ে থাকে । প্রতিবাদের কোন ভাষা তাদের ছিলনা ।ভারতীয়দের বন্ধু বলতে কেউ ছিলনা । দুঃখের দিনে এলেন এমন এক সাহেব তিনি ভারতবন্ধু লর্ড রিপন । ইনি দেশের শিক্ষা বিস্তারের চেষ্টা করলেন ।
সম্ভবতঃ ১৮৬০ সালে রামমােহন রায় প্রিভি কাউন্সিলে ভারতীয়দের প্রতিনিধি হয়ে যান । তিনি শিক্ষার চেষ্টা করেন।দেশের শিক্ষার নিয়ে,নারীর শিক্ষা বিস্তারের মনোযোগী হন।দরিদ্র ব্রাহ্মণ পরিকারের সন্তান পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়,হিন্দু কলেজ স্হাপনের মাধ্যমে দেশের শিক্ষার প্রসার করার চেষ্টা করেন।
তার জন্ম ১৮২০ সালে কিন্তু ১৮৩৭ সালে তিনি শিক্ষা আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা নেন । তিনি সংস্কৃত কলেজের পণ্ডিত মহাশয় ইনসপেকটরের পদে নিযুক্ত হন । নারীর শিক্ষার প্রয়ােজনীয়তার কথা তুলে ধরেন। বিভিন্ন রকম কুসংস্কারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেন । সতীদাহ প্রথা সহমরণ প্রথার বিরুদ্ধে রাজা রামমােহন রায়ের সঙ্গে যােগ দেন ।
নারী শিক্ষা ভিন্ন নারীর মুক্তি নাই । তাই মাতা ভগবতী দেবীর জন্য এই সব বিদ্যালয় স্থাপন করে মাকে শ্রেষ্ঠ অলংকার হিসাবে দান করেন ।
নারীরা ছিল অন্তঃপুরবাসিনী , পুরুষশাসিত সমাজে তাদের মাথায় ছাতা , পায়ে জুতাে দেওয়া অধিকার ছিল না । শুধুমাত্র তারা পুরুষদের মন তুষ্টির জন্য , সেবা করবার জন্য এবং বংশরক্ষার জন্য ব্যবহৃত হত । বিদ্যাসাগর এই মাতৃ জাতির শিক্ষার যদি কিছু উন্নতি যদি না হয় তবে তাদের অবমাননা করা হয় ভেবে মাতৃজাতির উন্নতির জন্য শিক্ষার ব্যবস্থা করেন । তাই তিনি মাতার অনুরােধে বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় মনােযােগী হন ।
এইভাবে ধীরে ধীরে শিক্ষার জন্য তিনি বর্ণ পরিচয় প্রথমভাগ ও দ্বিতীয়ভাগ রচনা করেন । সংস্কৃত ভাষা ছিল উচ্চশ্রেনীর মধ্যে সীমাবদ্ধ এবং পন্ডিত বিদ্বজনের পাঠ্য তাই সংস্কৃতের জটাজল থেকে মুক্ত করে তিনি সহজ পাঠ্য বাংলা হরফের অক্ষর শিক্ষার জন্য প্রথম ভাগ - বর্ণ পরিচয় রচনা করেন বাংলা ভাষা শিক্ষার ব্যবস্হা করেন।।
তারপর বর্ণপরিচয় দ্বিতীয়ভাগ ও বােধোদয় ইত্যাদি রচনা করে বাংলা ভাষা শিক্ষার ব্যবস্থা করেন। শিক্ষার ছলে রস সঞ্চারের জন্য বেতাল পঞ্চবিংশতি ও ভ্রান্তিবিলাশ ইত্যাদি রচনা করেন । এই রাজা রামমােহন ও বিদ্যাসাগরের চেষ্টায় দেশে শিক্ষার বিস্তার হয় ।মাতৃপুরুষগনের মহতী দানের মাধ্যমে মানুষের মনের মধ্যেকার আবেগ ইচ্ছা,কষ্ট বাঙালীর মনে সাড়া জাগায়।শিক্ষারম্ভ হয় কাছারী বাড়ীতে,মন্দিরের দুয়ারে,গাছের তলায়।
পাঠ্যাবস্হায় শিশুরা গুরুগৃহে থাকত।আরূণীর মত শিষ্য গুরুর সেবা,চাষ দেখাশোনার মাধ্যমে গুরু কাছে বিভিন্ন শ্লোক পাঠ করত বেদান্ত পাঠ করত গুরুগৃহে শিক্ষার সোপান।