সার্বজনীন - দুর্গা পূজার কবিতা পুজোর কবিতা
আজকের সকালটা সত্যিই অন্যরকম,
চারিদিকে সাজো সাজো রব
উমাকে প্যান্ডেলে আনার প্রস্তুতি তুঙ্গে
গানের তালে তালে নাচছে সবাই.. মা আসছে
সবাই ছুঁতে চায় পবিত্র হবার আশায়।
তারই ভিড়ে একজোড়া ছোট্ট হাত
মায়ের পা স্পর্শ করতেই খেঁকিয়ে উঠল সবাই
“যাঃ, এখান থেকে, মায়ের গায়ে হাত দিবি না।”
কাঁদতে কাঁদতে ছোট্ট দুটি হাত জড়িয়ে
ধরে মায়ের আঁচল, অশ্রুধারা ঝরে পড়ে চোখে,
বলে, “মা ওরা আমায় দুর্গাকে ছুঁতে দিল না কেন?
দুর্গা কি ওদের একার?”
অস্ফুট যন্ত্রণায় কুঁকড়ে ওঠে মা,
ছেলেকে জড়িয়ে ধরে বুকে, বলতে পারেনা,
যে হাত কয়লা ভাঙে উদয়াস্ত
যে হাত মাটি কোপায় পেটের টানে,
যে হাত সূর্যের মিথ্যে প্রতিশ্রুতিকে আড়াল করে,
যে হাত অপেক্ষা করে দুমুঠো খাবারের
সেই হাত দিয়ে দুর্গাকে ধরা যায় না।
জন্মের পরেই যে শিশুর কানে আসে
পাথর ভাঙার গান,
কখনো শাড়ির আঁচল, কখনো রৌদ্র ছায়ায়
বেড়ে ওঠে তার শরীরের কোষগ্রন্থি,
তার সত্যিই সাজে না।
আজ ঢাক ঢোল কাসর বাদ্যি সাজে মায়ের জয়যাত্রা,
কৈলাশ ছেড়ে মর্ত্যে আজ উমার আগমন।
ঐশ্বর্য্যে, প্রাচুর্য্যে তার ভরা সংসার,
এদিকে আড়ালে লুকানো দুটো চোখ ভিজে ওঠে
বলে, “মা দুর্গা কি ওদের একার?”
পাওয়া না পাওয়ার যন্ত্রণায়
কেটে যায় চারটি দিন
ছেলে হঠাৎ জড়িয়ে ধরে মা কে,
‘মা, ঐ দেখো’
হাতে ছোট্ট একটা মূর্তি, যেন রক্ত মাংসে গড়া।
মা চেয়ে দেখে ঐ দূরে
এক অশীতিপর বৃদ্ধা, শতচ্ছিন্ন মলিন কাপড়
যেন বহু যুগের পথ চলা এক পথিক।
চোখের পলকে যেন পাল্টে যাচ্ছে সবকিছু,
কেউ যেন মুচকি হেসে বলে গেল
“না রে, দুর্গা সবার।”
এদিকে মায়ের বিদায় বেলা
বাদ্যি, কন্ঠে আজ মিলেমিশে একাকার
সবার চোখে জল, ‘ বলো, দুর্গা মায় কি— জয়।’
খোকার চোখে আজ আর জল নেই
তার বুকে জড়িয়ে “মা”।
অন্য হাতে আর এক “মা”।
বলে, “মা ঘরে চলো।”