শিক্ষার সেকাল --- একাল
শিক্ষা একটি জাতির পথ প্রদর্শক । কিন্তু শিক্ষার মধ্যে যদি মানব জাতি ইতিহাস এবং মহাপুরুষের বাণী ও আদর্শ না থাকে তাহলে মানব মনের বিকাশ ও উন্নতির ধারা অব্যাহত থাকে না । তাই পাঠ্যসূচী সংস্কৃত শ্লোক , পঞ্চতন্রের গল্প ও মহা মানবের জীবনকাহিনী থাকত । কিন্তু এ যেন শিক্ষার সেকাল হয়েছে । এখনকার শিক্ষায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উপর জোর দেওয়া হয়েছে । মানসিক দৃঢ়তা ও আদর্শকে জোর দেওয়া হয়নি । তাই শিক্ষা ব্যবস্থায় কত বেশী পরিমান নম্বরের Percentage বাড়ানাে যায় তার চেষ্টা চলছে । লক্ষ লক্ষ মানুষের মধ্যে প্রযুক্তি মাধ্যমে Internet ব্যবস্থাকে অবলন করা হয়েছে । তাই রােবােটের মত যন্ত্রদানব তৈরী হচ্ছে ।
তাতে বিজ্ঞানের অগ্রগতিকে শিক্ষা সহায়ক হলেও জাতির উন্নতির জন্য যে মূল্যবােধ দরকার তা মানুষ তৈরীর কারখানাগুলােতে হচ্ছে না । লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয় করে যন্রদানব তৈরী হচ্ছে , কৰ্তব্যবোধ ও আদর্শচ্যুত এক একটা দানব তৈরী হচ্ছে । তাই সবসময় শিক্ষার সাথে মানুষ তৈরী করার কথা ভাবা দরকার ।তা না হলে শিক্ষা বুমেরাং হয়ে দাঁড়াবে । মানব মনের উন্নতি ছাড়া শান্তি নাই ।শক্তি জিনিসটা যােগ্যতা অর্জনের সাথে প্রায় লুপ্তহয়ে যাচ্ছে।
একালের শিক্ষা উন্নত শিক্ষা - উন্নত মানুষ গড়ার শিক্ষা নয় । মনটা অনেকটা স্বার্থ সর্বস্ব এককেন্দ্রিক চিন্তধারার হচ্ছে । কর্তব্যচ্যুত মানুষ অন্তর্দ্বন্দ্বে ভুগছে মানবমনের চেতনার বিকাশে শিক্ষা সহায়ক হচ্ছে না । Computer শিক্ষার মাধ্যমে শুধু বেকারত্ব বাড়ছে বা মানুষের মনটাও যন্রবৎ হচ্ছে ।ভাবের আদান প্রদান বিভিন্ন ইঙ্গিতে হচ্ছে । তাই মানুষের নিবিড় যোগ কমে যাচ্ছে।তাই শিক্ষাযন্র ।সভ্যতার মাধ্যমে মানুষের যােগসূত্র বিচ্ছিন্ন করছে ।
বিজ্ঞানকে কুপথে পরিচালিত করে বহুপ্রকার ক্ষতিসাধন হচ্ছে । মানুষে মানুষে আজ হানাহানি কাটাকাটি বাড়ছে। বিচ্ছিতাবাদ জন্ম নিচ্ছে মানুষের মনের বিভেদ থেকে । এই বিভেদকামী শক্তি একদিন না একদিন ধ্বংস করবে। শিক্ষার সাথে মানবিক মূল্যবোধের শিক্ষা দেওয়া দরকার । মূল্যবােধকে জাগ্রত না করলে দেশের ও জাতির উন্নতি সম্ভব নয়
" হিংসা যেদিন যাইবে
পৃথিবী ছাড়ি ---
সব তরবারি হইবে
সেদিন কাষ্ঠের তরবারি । "
হিংসা বিদায় নিলে অস্ত্রও ভােতা হবে । সৌহার্দ্য ও প্রীতির বন্ধন হলে মানুষ মানুষকে অর ধ্বংস করতে চাইবে না । তখন জাতির অখন্ডতা আসবে । জাতীয় সংহতির প্রশ্নে মানুষ মানুষের নিবিড় স্থাপন করবে । আর বিশ্বায়নের যুগেও মানুষ অনেক বেশী অগ্রসর হতে পারবে ।
শিক্ষা মানব মনে চেতনা অানবে । দৃঢ়চেতা মানবমন অখন্ড জাতি গঠনে সহায়তা করবে । তখন এ কালের শিক্ষা ও সুন্দর হবে । বিগত সরকারের আমলে নিরক্ষরতা দূরীকরনের জন্য যেমন সাক্ষরতার অভিযান করা হয়েছিল ।
সর্বশিক্ষা ব্যবস্হা গ্রহণ করা হয়েছিল তেমনি ইংরাজী শিক্ষা থেকে মানুষকে সরিয়ে রাখার একটা কৌশল করা হয়েছিল । তাই যে সব ছাত্রছাত্রীরা ইংরাজী অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়েছিল । কিন্তু সর্ব ভারতীয় পরীক্ষাগুলাের ক্ষেত্রে ইংরাজীর প্রাধান্য আজও বিদ্যমান । অনেক ছাত্রছাত্রী ইংরাজীতে দুর্বল থাকার দারুণ সর্বভারতীয় পরীক্ষাগুলােতে অংশগ্রহন করাতে পারেনি ।
সংস্কৃতকে অনেকটা বাদের খাতায় রেখে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষা ব্যবস্থার একটা গ্যাপ তৈরী হয়েছিল । মাধ্যমিক পরীক্ষায় সংস্কৃত বাদ দেওয়া হয়েছিল ! আবার Council এর নিয়মানুযায়ী সংস্কৃতকে একাদশ - দ্বাদশ শ্রেণী রাখা হয়েছিল । কলেজ লেভেলে সংস্কৃত রাখা হয়েছিল । সংস্কৃতে অনার্সের তখন অনেকটা চাহিদা ছিল । তাই অনেক ছাত্রছাত্রী অনার্স সংস্কৃতে করার পর চাকুরীতে যােগদান করার সুযােগ পেয়েছিল ।